Uncategorized

Dhaka- The Mega City

রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা, যেটাকে আমরা মেগাসিটি বলি, তার জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৭০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) দেওয়া এই হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ১১তম। কিন্তু আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হিসাবে এটিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘন শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ। এটা ভীষণ উদ্বেগজনক তথ্য।জনসংখ্যা রেখে এবার আসি পরিবেশ দূষনের দিকে।দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। আমাদের ভবিষ্যৎ কতোটুকু নিরাপদ। আমাদের বর্তমান অবস্থাই বা কি! আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে কি করছি এই বাস্তবতা বদলানোর জন্য?প্রশ্ন গুলো এবার একটু অন্য ভাবে পর্যালোচনা করি।যেখানে আমাদের দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করেন সেখানে দুই-তিন বা পাঁচ হাজার বর্গফুটের বাড়ির ছাদগুলো তালা বন্ধ করে ফেলে রাখা সত্যি বিলাসিতা। জার্মানিসহ গোটা ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ যেখানে জনসংখ্যা নেগেটিভ আয়তন অনেক বড়, সেখানে শুধু ছাদেই নয় জানালার কোণা থেকে শুরু করে বাড়ির দেয়াল কোথাও বাকি নেই, যেখানে তারা গাছ লাগায় না। স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়োবুড়ি সবার প্রকৃতি প্রেম। ৮০-৯০ বছরের বয়স্ক পুরুষ-নারীও সারা দিন বাগানে কাজ করে গাছের পরিচর্যা করেন। এসব উন্নত দেশগুলোতে মালি বা কাজের লোকের বিলাসিতা নেই। বাজার, রান্না, ধোয়ামোছা, বাগানের পরিচর্যা, সার-পানি দেওয়া, সব নিজেদের করতে হয়। আর এই সব গাছের বেড়ে ওঠার জন্য যে সার দরকার তাও তারা নিজেরাই ঘরে তৈরি করেন। অনেক বাড়ি থেকে কোনো পচনশীল আবর্জনা পাওয়া যায় না, মানে শূন্য পার্সেন্ট। বাংলাদেশে আগে গ্রামের বাড়িগুলোতে উঠোনের পাশে মাটিতে পচনশীল আবর্জনা পুতে রাখার ব্যবস্থা থাকলেও শহরের বাড়িতে তা অসম্ভব। জার্মানিতে বাড়ির বাগানে নেটের একরকম খাঁচা থাকে, যেখানে তারা প্রতিদিনের রান্না ঘরের পচনশীল বর্জ্যগুলো ফেলে রাখেন। সেগুলো পরে রোদে বৃষ্টিতে মাটিতে মিশে গিয়ে মাটি উর্বর করে।আমাদের দেশেও বাড়ির ছাদে খোলা ড্রাম বা ইটের চারকোনা বাক্সে এক স্তর পচনশীল বর্জ্য এক স্তর মাটি বা বালি দিয়ে খুব সহজে জৈব সার বানানো যায়। যেটা ওই বাড়ির ছাদের বাগানের সারের চাহিদা মেটাতে পারে। বাড়ির প্রতিদিনের রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট থেকে যেমন জৈব সার পাওয়া যায়, বাইরে থেকে সার কেনার দরকার হয় না তেমনি বালিভর্তি অনুর্বর মাটির উর্বরা ফিরিয়ে দেওয়া যায়। সব উন্নত দেশ এমনকি ভারতেও এখন বায়োফুড বা কেমিক্যাল সার ও কীটনাশক মুক্ত খাবার বা শাকসবজি চাষাবাদ শুরু হয়েছে। আমাদের পুরো ঢাকা শহর কংক্রিটে ঢাকা। কোথাও কোনো খালি জায়গা নেই। যেকোনো আবাসিক এলাকা যেমন বসুন্ধরার ১০০টি বাড়ির ৫০০০ বর্গফুটের ছাদ মানে পাঁচ লাখ বর্গফুট খালি জায়গা। ছাদগুলোর অর্ধেক খালি জায়গায় যদি শুধু কাঁচামরিচ লাগানো যায় তাহলে চাহিদার বিপুল অংশ গূরণ হতে পারে। বাংলাদেশে মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে মরিচের অবস্থান প্রথম সারিতে। তারপরেও দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ মরিচ প্রতি বাড়িতে প্রতিদিন দরকার। একটি ৩০০০ বর্গফুটের ছাদে খালি ৩০ থেকে ৫০টি গাছ অনায়াসে লাগানো যায়। কাঁচা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১০০-১২০ কেজি মরিচ পাওয়া যেতে পারে। তাহলে পুরো ঢাকা শহরে বা দেশের বড় বড় শহরগুলোর ছাদে প্রচুর মরিচের সম্ভাবনা রয়েছে। ফুলের টবে না লাগিয়ে পিলার বরাবর দেড় থেকে দুই ফুট গভীর ইটের চৌবাচ্চার মতো হলে পানি বা সার দেওয়া সহজ এবং জায়গা বেশি পাওয়া যায়। পাশাপাশি চিলেকোঠার দেয়ালে একটি কবুতরের ঘর বানিয়ে দিলে ভাত ও অন্যান্য উচ্ছিষ্ট খেয়ে এক জোড়া কবুতর বাসায় নির্মল বিনোদন ও প্রশান্তি এনে দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়ির শিশুদের কিছু সময়ের জন্য ভিডিও গেম থেকে দুরে রেখে ইট-কাঠ-পাথরের শহরেও প্রকৃতির প্রতি মায়া, মমতা ও ভালোবাসার জন্ম দিতে পারে। কবুতরগুলোও আকাশে ডানা মেলে ইকো-সিস্টেমের ভারসাম্য আনতে পারে।একটি বাড়ির ছাদের চারদিকে দেয়ালের ধারের পিলার বরাবর বাগান করা হলে পিলার সহজে মাটির বাড়তি ওজনের ভার নিতে পারে। সিঁড়ি বা চিলেকোঠার একদিক বাদ রেখে বাকি তিন দিকে গাছ লাগানো যায়। এক পাশের দেয়ালের এই ইটের ঘর সব সময় খোলা রেখে এক স্তর বালি এক স্তর রান্নাঘরের পচনশীল বর্জ্য রোদে এবং বৃষ্টিতে ভিজে কম্পোস্ট হয়ে সার বানানোর জন্য রেখে বাকি দুই দিকে গাছ লাগানো যায়। বালি বা মাটি দেওয়ার ফলে এই পচনশীল বর্জ্য গন্ধ ছড়াবে না। এরপরে সেটি পুরোপুরি ভরে গেলে গাছ লাগানোর তৈরি হয়ে গেল। ফলে বাইরে থেকে মাটি আনার দরকার নেই। রান্না ঘরের বর্জ্য পচে অনুর্বর বালির সঙ্গে মিশে জৈবসার হয়ে গেল। এভাবে অন্য পাশের দেয়ালগুলো পর্যায়ক্রমে উর্বর মাটি তৈরি করে নিলে বাইরে থেকে সার বা মাটি আনার দরকার হয় না। অন্যদিকে পচনশীল বর্জ্য কাজে লাগানো গেল। আমাদের দেশের আবহাওয়া উচ্চ তাপমাত্রা ও প্রচুর আর্দ্রতা শীতপ্রধান দেশগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত জৈবসার তৈরি করে। অন্যদিকে ঢাকার ৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য থেকে যদি ৫০০ টন জৈব সার পাওয়া যায় (প্রতি কেজি ইউরিয়ার সমপরিমাণ দাম হলে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার সার উৎপাদন সম্ভব। ইউরিয়া আমদানি খরচ ৩০ টাকা প্রতি কেজি)। এতে একদিকে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো গেল অন্যদিকে অনুর্বর শুষ্ক মাটিতে উর্বরতা বাড়ানো যায়।সরকারি কর্মকর্তা (সচিব) নজরুল ইসলাম খান তার মিন্টো রোডের সরকারি বাড়ির প্রতিটি কোণে সবুজ গাছ লাগিয়েছেন। পুরোটাই প্রাকৃতিক জৈব সার থেকে ইকো ব্যালেন্স করে।ঢাকা শহরের অনেক এলাকা বিশেষ করে যেখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে সেখানে ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় খুব সহজেই। ছাদের চিলেকোঠা থেকে সরাসরি বাগানের গাছে পানি দেওয়া, কাপড় বা গাড়ি ধোয়ার জন্য একটি আলাদা স্থায়ী বা ব্যবস্থা করার না হলে অস্থায়ী প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকে সংরক্ষণ করা গেলে পরে তা বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করা যেতে পারে।সবুজ চাষ করা মানে হলো বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস আটকে আলাদিনের দৈত্যর মতো বোতলে আটকে ফেলা (কার্বন ট্র্যাকিং)। সেই সঙ্গে সুপ্ত তাপমাত্রা আটকে ফেলা। ঘরের ভেতরের মানি প্ল্যান্ট বা অন্য সবুজ গাছ যেগুলো রোদ ছাড়া বেঁচে থাকে তাও ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে কার্বন বা বিষাক্ত গ্যাস শুষে নেয়। ঘরের ফ্রিজ, এসি, আইপিএসসহ অন্য সব ব্যাটারি প্রতিনিয়ত বাতাসে দূষিত কেমিক্যাল নিঃসরণ করে।এ এক সত্যি বিস্ময় যেখানে আমরা শিশুদের খোলা আকাশ দেখাতে পারি না। জানালা খুলে তাকালে আর একটি জানালা। সেখানে ছাদগুলো তালা বন্ধ রেখে স্বপ্নগুলোকে সেই সঙ্গে স্বাধীনভাবে শ্বাস নেবার অধিকারটুকুও হত্যা করা হয়। ছাদে নিয়মিত সবজি বা ফুলের চাষাবাদের ফলে মুক্ত বাতাস আর প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যেত। এটা না করে আমরা জোর করে শিশুদের পিষে ধরে টিভি সিরিয়াল, ভিডিও গেম বা ইন্টারনেটে আসক্ত করছি।পৃথিবীর সব উন্নত দেশগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন রঙের ব্যাগ ও ভিন্ন ভিন্ন রঙের ড্রামের ব্যবহার করে আলাদাভাবে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করার হলেও আমাদের দেশে এখনো কোনো আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায় না।সুতরাং এখন থেকে শুরু হোক সবুজের আন্দোলন। সেটা নিজের শোয়ার ঘর আর প্রতিটি বাড়ির বন্ধ ছাদ থেকে। নিজের আর নিজের সন্তানের সুস্থভাবে শ্বাস নেবার প্রতিজ্ঞায়। এর সঠিক বাস্তবায়নে সরকারের যথাযথ নীতিমালা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগ বাড়ানোর পাশাপাশি রয়েছে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ( সংগৃহীত )