বছরের যে কোনো সময়ই যদি চোখের সামনে বা বাড়ির কোনো একটি জায়গায় সুন্দর সুন্দর ফুলের সমাহার থাকে তা হলে ভালো লাগে না এমন মানুষ হয়তো নেই। আর সেখানে ঋতু যদি শীতকাল হয় তা হলে তো কথাই নেই। নিজেদের সৌন্দর্যে ফুলেরা যেন হাত ছানি দিয়ে ডাকে। এমন সুন্দর ফুলের এক ফালি ছোট্টো বাগানের শখও প্রায় সকলেরই। তাই শীত কালে ঠিক কী কী ফুল বাড়িতে করা যায়, কী ভাবেই বা তার যত্ন নেওয়া যেতে পারে সে নিয়ে রইল কয়েকটা টিপস।
গোলাপ:-
বেশির ভাগ মানুষের প্রিয় ফুল গোলাপ। সারা বছর ধরে গাছে গোলাপ ফুটলেও শীতকালে এর ফলনও যেমন বৃদ্ধি পায় ঠিক তেমনই এর রূপও আরও খোলতাই হয়। গোলাপ যেমন বিভিন্ন রঙের হয়, তেমন এদের চেহারাও বিভিন্ন হয়। এদের মধ্যে রয়েছে, রানি এলিজাবেথ, এলিজাবেথ, ব্ল্যাক প্রিন্স, ইরান, রোজ গুজার্ড, জুলিয়াস রোজ ইত্যাদি। গোলাপ গাছ বেশি রোদে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভালো হয়। এর জন্য ১২ ইঞ্চির টব উপযুক্ত। তবে গাছ ছোটো থাকলে ১০ ইঞ্চির টবও চলতে পারে। সাধারণ ভাবে ফুল হয়ে গেলে সেই ডাল কিছুটা কেটে দিলে আবার নতুন ডাল জন্মায় তাতে আবার ফুল ধরে। গাছের গোড়ায় যে আগাছা জন্মায়, সেগুলি পরিষ্কার করে দিতে হয় নিয়মত। গাছের গোড়ায় মাটি একটু কুপিয়ে আলগা করে দিতে হয়। তাতে সার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। সারের মধ্যে দেওয়া যেতে পারে গোবর, খোল আর শুকনো চা পাতা।
গাঁদা:-
গাঁদা ফুলটি খুব জনপ্রিয়। শীতের সময় বেশিরভাগ বাড়ির টবে বা বাগানে এই ফুল দেখা যায়। বড়ো বড়ো থোকা গাঁদা এই সময় বেশি ফুটতে দেখা যায়। তবে শীত শুধু নয়, প্রায় সারা বছরই গাঁদা পাওয়া যায়। নানান রঙের গাঁদা হয়ে থাকে। লাল, হলুদ, কমলা রঙের। গাঁদা বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন – চায়না গাঁদা, রক্ত গাঁদা, দেশি গাঁদা, বড়ো ইনকা গাঁদা ইত্যাদি। গাঁদা গাছের জন্যও ভরপুর রোদের প্রয়োজন। টব মাঝারি মাপের হলেও চলে। গাঁদা ফুলের আকার বড়ো করতে চাইলে তার জন্য কুঁড়িগুলিকে নখের হালকা খোঁচায় অল্প করে ভেঙে দিতে হয়। তাতে ফুল ফুটলে আকার বেশ খানিকটা বড়ো হয়। ফুল যখন শুকিয়ে যায় তা ফেলে না রেখে ডাল থেকে কেটে দেওয়া উচিত। বলে রাখা ভালো, শুকনো গাঁদার পাপড়ি ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে দিলেই চারা গাছ জন্মায়।
চন্দ্রমল্লিকা:-
শীতকাল মানেই যে ফুলটির নাম একডাকে মনে আসে তা হল ক্রিসেনথিমাম অর্থাৎ চন্দ্রমল্লিকা। এই ফুলটির শতাধিক প্রজাতি রয়েছে। তবে এ দেশে কয়েক রকমেরই পাওয়া যায়। বহু রঙের এবং মাপের চন্দ্রমল্লিকা হয়ে থাকে। গাছপ্রেমীদের বিশেষ পছন্দের হল এই চন্দ্রমল্লিকা। চন্দ্রমল্লিকা গাছের জন্য আট থেকে দশ ইঞ্চির টব উপযুক্ত। এই গাছও বড়ো গাছ থেকে ডাল কেটে বসালে শেকড় বিস্তার করে নিজে গাছে পরিণত হতে পারে। এই ফুলের জন্য দরকার ঝলমলে রোদ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া। নিয়ম করে জল ও সার দিতে হয়। নীচের দিকের পাতা শুকিয়ে গেলে সেগুলি পরিষ্কার করে দিতে হয়।
ডালিয়া:-
চন্দ্রমল্লিকার মতোই আরও একটি জনপ্রিয় শীতকালীন ফুল হল ডালিয়া। এরও রঙের সংখ্যা অগুনতি। ভারী থোকা বড়ো মাপের ডালিয়া মানুষের মন কেড়ে নেয় অনায়াসেই। তা ছাড়াও বিভিন্নি মাপের চন্দ্রমল্লিকা ফুটতে দেখা যায়। ডালিয়ার লাল, চকোলেট, হলুদ, সাদা, গোলাপি, বেগুনি প্রভৃতি বর্ণের হয় ফুল। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হল অ্যানিমোন, ডেকোরেটিভ, কলারেট, পিওনি, পমপন, মারলিন ইত্যাদি। এই ফুলের জন্য দরকার ঝলমলে রোদ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া। বড়ো টবে এই ফুল ভালো হয়। এই গাছে একটু যত্নের প্রয়োজন পরে। নিয়মিত জল দিতে হয়। সার দিলে এর ফলন ভালো হয়। শুকনো পাতা ফেলে দেওয়া ভালো।
ক্যামেলিয়া:-
ক্যামেলিয়া একটি বিদেশি ফুল। সাধারণত ফুলটি সাদা ও লাল রঙের হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা গোলাপের মতো। এক স্তর বা বহু স্তর পাপড়ি যুক্ত হয়ে থাকে। চা গাছের মতো এর পরিচর্যা করতে হয়। এই ফুলটি সাধারণত বছরে একবারই ফোটে।
কসমস:-
কসমস বিদেশি ফুল হলেও আজকাল শীতকাল এলে এখানেও এর কদর বাড়ে। গাছটি ৯০ থেকে ১২০ সেমি লম্বা হয়। নানা রঙের হয় এই কসমস ফুলটি। তার মধ্যে রয়েছে সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা ইত্যাদি বর্ণ। এই ফুল শুকিয়েই বীজ হয়। খুব দ্রুত এটি বড়ো হয় ও ফুল ধরে। শীতের শেষের দিকে তাই কয়েকটি ফুল গাছে রেখে শুকিয়ে নিলে বীজ তৈরি হয়ে যায়। পরবর্তী বছরে সেই বীজ মাটিতে ছড়িয়ে দিলে গাছ জন্মায়। এই গাছে রোজ জল দেওয়ার বা বিশেষ সার দেওয়ার দরকার পড়ে না। তবে বেশি রোদ থাকলে গাছটিতে ফুল ভালো হয়। মাঝারি মাপের টবেই কসমস গাছ হতে পারে।
সূর্যমখী:-
সূর্যমখীও এটি শীতকালীন ফুল। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকার জন্য এর নাম সূর্যমুখী। এর বীজ হাঁস, মুরগির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবী বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাষ হয়। এর তেল অন্যান্য রান্নার তেলের তুলনায় ভালো। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগের পক্ষে উপকারী। এই গাছ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাঝারি টবে এই গাছ ভালো হয়, উপযুক্ত যত্ন করতে পারলে অনেক ফুল হয়। জিনিয়া:- ধূসর সবুজ রঙের ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল গাছটি বেশ নজরকাড়া। এই ফুলের গাছ ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। লাল, গোলাপি, বেগুনি, সাদা রঙের ফুল হয়। মাঝারি ছোটো টবে এই গাছ ভালোই হয়।
পিটুনিয়া:-
আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনার ফুল এই পিটুনিয়া। শীতকালে এ দেশেও বেশ ছেয়ে যায়। ঘণ্টাকৃতির এক একটি ফুল। সাদা, বেগুনি, গোলাপি, লাল নানান রঙের ফুল ফোটে। মাঝারি বা ছোটো টবে এই গাছ ভালোই হয়।
সব ক’টি গাছের ক্ষেত্রেই যে বিষয়টি দরকার তা হল দোঁয়াশ মাটি। এই মাটিতে তিনি ভাগের এক ভাগ পরিমাণের জৈব সার মেশাতে হবে। গাছে জল দেওয়ার সময় গাছের শুধু গোড়ায় নয়, পাতা ভিজিয়ে সুন্দর ভাবে জল দিলে গাছের ওপরের ধুলো-বালি ধুয়ে যাত্য ও গাছও সুস্থ এবং সতেজ থাকে। পাশাপাশি পোকা মাকড়ের আক্রমণও কম হয়।