Nursery

বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব

Importance of Tree plantation

গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছের তৈরি অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে আছি। ফুলের সৌন্দর্য মনকে প্রফুল্ল করে। ফল মানুষের পুস্টি জোগায়। বৃক্ষ আমাদের ছায়া দেয়। অকাজের গাছটিও জ্বালানি হিসেবে মানুষের উপকারে আসে। শিল্পের নানা উপাদান হিসেবে গাছ ও তার ফল ব্যবহার হয়। গাছের সীমাহীন গুরুত্ব সত্ত্বেও আমাদের বনগুলোর অবস্থা আজ হতাশাজনক। বিখ্যাত সুন্দরবন আমাদের গর্ব। কিন্তু এখন আর সুন্দরবনের সেই সৌন্দর্য নেই। ভাওয়ালের শাল-গজারীর বন ধ্বংসের পথে। মধুপুর আর সিলেটের বনের অবস্থাও ভালো নয়। পাবর্ত্য জেলাগুলোর বনের অবস্থা কারও অজানা নয়। র্নিবিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাহাড়ধস ও নদী ভাঙনের ঘটনা, ধ্বংস হচ্ছে বসতবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এভাবে বাংলাদেশ হারাতে বসেছে তার চিরচেনা রূপ।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে পার্বত্য বনাঞ্চলে প্রবেশ করে বন উজাড় করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে। তারা জ্বালানি ও জীবন নির্বাহের জন্য কী পরিমাণ বৃক্ষনিধন করছে তা কল্পনার বাইরে। তাই চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনের অবস্থাও করুণ। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনাঞ্চল থাকা জরুরি। আমাদের রয়েছে ১৬ শতাংশ বনভূমি। বর্তমান বাস্তবতায় এর পরিমাণও কমছে। এ কারণে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের নিত্যসঙ্গী। এখনই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবা দরকার। তা না হলে এক সময় দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যেতে পারে, যা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য বিশাল হুমকিস্বরূপ।

শহর অঞ্চলে বাতাসে কার্বনডাইঅক্সাইড বেশী বিদায় এখানে গাছের চাহিদা বেশী। কিন্তু এর তুলনায় জায়গা কম। ছাদবাগান বা বেলকুনীতে গাছ লাগানো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷খুব সীমিত আঙ্গিকে হলেও সরকারও ছাদবাগানকে উৎসাহিত করছে৷ শুধু ঢাকা শহরের উদাহরণ দেই৷ ৬০-৭০ ভাগ কংক্রিট হয়ে গেছে৷ ১০ বছর আগে এখানে গাছপালা ছিল ১৬-১৭ ভাগ৷ এরও ২৫-৩০ বছর আগে ছিল ৩০ ভাগের বেশি৷ আর এখন এটা কমতে কমতে ৮ ভাগে নেমে এসেছে৷ এর কারণ হলো, বিল্ডিং বাড়ছে, রাস্তা হচ্ছে৷ গাছ কেটে ফাঁকা করে ফেলা হচ্ছে৷ এভাবে ৭০ ভাগ কংক্রিট হয়ে গেছে৷ গাছের একটা কুলিং এফেক্ট আছে৷ এটা যাঁরা বিজ্ঞান পড়েছেন, তাঁরা জানেন৷ গাছের উপর রোদ পড়লে সে তাপটা সংগ্রহ করে পানি ছাড়ে৷ এতে গাছের নীচে সবসময় ঠাণ্ডা থাকে৷ এভাবে তাপ প্রতিসরণ করে সে মহাশূণ্যে ফেরত দেয়৷

মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত। উপজেলা কৃষি অধিদফতর মাটির পিএইচ, কপিসিং ক্ষমতা, নাইট্রোজেন সরবরাহের ক্ষমতা, আর্দ্রতা ও খরা সহনশীলতা, আগুন সহনশীলতা, লোনা সহনশীলতা, অঞ্চলভেদে বৃক্ষ নির্বাচন, রোপণ পদ্ধতি, পরিচর্যা, রোগবালাই ও প্রতিকারসহ যাবতীয় কারিগরি সহায়তা ও নির্দেশনা দিলে বৃক্ষরোপণ আন্দোলন ফলপ্রসূ হতে পারে। দেশে প্রত্যান্ত অঞ্চলে নার্সারির সংখ্যা কম। তাছাড়া নার্সারিগুলো জেলা বা উপজেলাভিত্তিক হওয়ায় দূরত্বের কারণে পরিবহনে অনেক চারা নষ্ট হয়ে যায়। এতে অনেকেই চারা সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। শুধু ব্যাবসায়িক নার্সারির ওপর ভরসা করে দেশে কাঙ্ক্ষিত বনায়ন সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত নার্সারিতে চারা পাওয়া গেলেও দাম বেশি হওয়ায় তা গ্রামের গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে না। তাই চারাপ্রাপ্তির বিষয়টি সহজলভ্য করতে ইউনিয়ন ও স্কুল পর্যায়ে নার্সারি কর্মসূচি প্রচলনে সরকারি উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বনবিভাগ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সপ্তাহ, পক্ষ ও মাসব্যাপি বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করলেও বাস্তবে এর সফলতা কতটুকু? চারা হস্তান্তরের পর রোপণই বা করা হয় কয়টি? যে ক’টি রোপিত হয় তার রক্ষণাবেক্ষণই বা হচ্ছে কেমন?
সত্যিকার অর্থে বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে গাছ লাগাতে হবে নিজের স্বার্থে ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে। বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণে সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সব পেশাজীবী মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণকে একটি কার্যকর আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা, বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক উন্নত নার্সারি সৃজন এবং সবার আন্তরিকতাই পারে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অরণ্য ফিরিয়ে দিতে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *